আব্বুর কাছে প্রচন্ড বকা খাচ্ছে ভাইয়া। অন্যসময় ভাইয়াকে বকলে আম্মু আব্বুকে থামতে বললেও এখন আম্মুও বকাঝকা করছে৷ শুরু থেকেই বসে পর্যবেক্ষণ করছি, বকার রেশ একটু কমলেই তা বাড়িয়ে দেওয়াই আমার কাজ। কারণ ভাইয়া ঘর থেকে খাবার চু°রি করেছে।
আগে থেকেই বেচারাকে চো°র ভেবে লাভ নেই বা তাকে খেতে দেয়না ব্যাপারটা এমন কিছুও না।
ভাইয়া আমার এমনিতে অনেক ভালো মানুষ৷ শান্ত স্বভাব, হ্যান্ডসাম লুকে যেকোনো মেয়ের নজর কাড়তে পারবে৷ তবে তার একটা বদঅভ্যাস হলো কোনো একটা অভ্যাস হয়ে গেলে তা সহজে ছাড়তে পারে না।
কয়েকদিন আগে ফুটবল বিশ্বকাপ হয়ে গেল। আর্জেন্টিনা সাপোর্টার হওয়ায় বেশ ভালোই জমিয়ে খেলা দেখেছে সে। বাকি দলের প্রতিটা ম্যাচও বেশ মনোযোগেই দেখেছে, তবে বাসায় নয় মাঠে বন্ধুদের সাথে বড় পর্দায় দেখেছে। আর বাসা থেকে খোয়া গেছে বিস্কুট, চানাচুর, কেক, চিড়ামুড়ির মোয়া, জুস, কফি, গুড়া দুধ ইত্যাদি। বাসার নাস্তাগুলো সব তারই কেনা। মাসশেষে টিউশনি থেকে বেতন পেয়েই সব কিনে আনে।
তাই আব্বু তেমন কিছু বলেও না। একবার শুধু জিজ্ঞাসা করায় ভাইয়া বলেছিল,
"খেলা দেখতে দেখতে খাবার খাওয়ার মজাই আলাদা। তোমরাও ট্রাই করতে পারো। এনে দিবো?"
"দরকার নেই।"
তখন আব্বু ততটা রাগেনি, কারণ সে রোজ রোজ তো আর এমন করবে না।
বিশ্বকাপ শেষ, তবুও বাসা থেকে নাস্তা গায়েব হচ্ছে। ভুল করে নাস্তাগুলো কি মাঠে চলে যাচ্ছে? খুব চিন্তায় ছিলাম আমি।
গতরাতে ওতপেতে ছিলাম আমি। রাত তখন প্রায় ১ টা বাজে, ডাইনিং এ খু°চুরখু°চুর শব্দ পেয়ে উঁকি দিয়ে দেখি ভাইয়া চানাচুর আর কেকের প্যাকেট নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। দরজা বুজিয়ে আরামসে চিবাচ্ছে।
আমি আব্বুকে ডেকে নিয়ে গেলাম। হাতেনাতে ধরা পড়লো আমার আদরের ভাইয়া। রাতে কিছু না বললেও সকালের নাস্তার আগেই ভাইয়ার সাথে ভাষণ দিতে বসলেন আব্বু।
এখনো তাই চলছে।
"কি হলো তামিম? এতো কথার জবাব দিচ্ছো না কেন? রোজ রাতে তুমিই খাবার চুরি করতে?"
মাথানিচু করে ভাইয়া মিনমিনিয়ে বলল,
"জি, আব্বু।"
"কেন?"
আড়চোখে একবার আমার দিকে তাকালো। তারপর বলল,
"আসলে আব্বু, ওই.. আমি.. ।"
আব্বু ধমক দিয়ে বলল,
"সোজা সোজা কথা বলো।"
ভাইয়া জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
"আব্বু, আমার আসলে রাতে খাওয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে৷ কিছুতেই এই অভ্যাস ছাড়তে পারছি না।"
"তোমার খাবার টাইম পাল্টালেই কাজ হবে।"
"মানে?"
ভাইয়া বড়বড় চোখ করে জিজ্ঞাসা করলো।
আব্বু আম্মুকে বলল,
"আমরা সবাই ডিনার করবো নয়টায় আর তামিম করবে ১২ টায়। তাও নিজে রান্না করে। একসপ্তাহ এমনে চললে অভ্যাস বের হয়ে যাবে। অকারণে টাকা উড়ানো হচ্ছে? আমাকে তো চেনো না?"
"আব্বু।"
ন্যাকাসুরে ভাইয়া বলেও এক রাম ধমক খেলো।
আমি ফিক করে হাসতেই ভাইয়া দাঁত কি°ড়মি°ড়িয়ে আমার দিকে তাকায়৷ আমি এগিয়ে দিয়ে ভাইয়ার কানের কাছে বললাম,
"আহারে বেচারার জীবনযাপনই পালটে গেল। আগামী একসপ্তাহ নিজে রেঁধে খাও। অখাদ্য হলেও তোমার আর খাদ্য হলেও তোমারই।"
ভাইয়ার কাঁ°টাগায়ে নুনের ছিটা দিয়ে বেশ আরাম পেলাম।
সমাপ্ত
#নাস্তা_চু_রি
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
(এমন অভ্যাস কারো হইছে নাকি?)
আরো পড়ুন: