পড়ার টেবিলে বসে নিজের ব্যাক্তিগত ডায়েরি তে কিছু লিখে আবার কলম দিয়ে কাঁটাকাঁটি করে ডায়েরির উপরেই দুই হাত ভাজ করে মাথা রেখে নিরবে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে মৃন্ময়ী। কখনো বা ডুকরে কেঁদে উঠছে। ডায়েরির পাতা গুলো ভিজে যাচ্ছে মৃন্ময়ীর চোখের জলে। কাল রাতেও সে বিছানায় এক কাত হয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ঘুমিয়েছে। এরকম টা যে কালই হয়েছে তা নয়। আজকাল প্রায়সময়ই মৃন্ময়ী এভাবে নিরবে নিজ রুমে বসে চোখের জল ফেলে কিছু একাকিত্ব সময় পার করে। বেশ কিছু সময় পার হবার পর মৃন্ময়ী ডায়েরিটা নিজের টেবিলের ড্রয়ারে রেখে তালা দিয়ে চাবিটা বইয়ের ভিতর রেখে রুম থেকে বের হয়ে গেল। সব কিছু আড়ালে না রাখলেও নিজের ডায়েরিটা মৃন্ময়ী সবসময়ই সবার আড়ালে রাখে। তার মতে কিছু জিনিসের উপরে একান্তই শুধু তারই অধিকার আছে আর কারোর নেই।
রুম থেকে বের হয়ে যেতেই দেখল তার মা চা বানাচ্ছে। সেদিকে সে ওতো একটা খেয়াল না দিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে রওনা দিল। যেহেতু তার মা চা বানাচ্ছে তার মানে নিশ্চয়ই বাসায় কেউ এসেছে। কে এসেছে তা দেখার জন্য ড্রয়িং রুমের দিকে পা বাড়াল মৃন্ময়ী।
যেয়ে দেখল সোফায় তার বন্ধু শিবলু আর তাঁর ফুপাতো ভাই সিয়াম বসে আছে। মৃন্ময়ী তাদের দেখে মুচকি হাসল। শিবলু মৃন্ময়ী একই বয়সের। তারা এবার একসাথে ভার্সিটিতে ভর্তি হবে। সেই ক্লাস থ্রি থেকেই তাদের বন্ধুত্ব। আর অপরদিকে ফুপাতো ভাই সিয়াম মৃন্ময়ীর এক বছরের বড়। সে এবার আহসানুল্লাহ ভার্সিটিতে আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত আছে। বয়সে সিয়াম মৃন্ময়ী আর শিবলুর চেয়ে বড় হলেও ছোটোবেলা থেকে সেও ওদের সাথেই মিশে এসেছে। মৃন্ময়ী মাঝে মাঝে ভাবে তারা ভুল করে এক একজন অন্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে। না হয় ওদের বন্ধুবান্ধব ছয় থেকে সাতজন কে যে কেউ দেখলেই বলবে তারা সবাই হয়ত আপন ভাইবোন। মৃন্ময়ী এসব ভাবতে ভাবতেই দেখল তার মা ওদের সামনে ওদের তিনজনকেই চা দিয়ে গেছে। আর শিবলু ততক্ষনে মৃন্ময়ীর সামনে এসে নিশব্দে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে শিবলু বলে উঠল
-" দুদিন ধরে ফোন ধরছিস না। আবার মেসেঞ্জারেও তোর কোনো খোঁজখবর নেই। কি হয়েছে?"
মৃন্ময়ী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠল - " তেমন কিছুই হয়নি। ঠিক আছি। "
শিবলু কিছু বলতে যাবে তার আগেই সিয়াম এসে মৃন্ময়ীকে বলল - "বাইরে যাব মজবুল কাকার দোকানের চা খেতে শায়ওখ সাদিকা সাকিব ওরাও আসবে। যাবি?"
মৃন্ময়ী কিছুই বলল না। ততক্ষণে সিয়াম চা টা শেষ করে শিবলু কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মৃন্ময়ী বলল
-" সোয়েটার টা পড়ে আসছি। দাঁড়া। "
সিয়াম আর শিবলু দুজনেই মুচকি হেসে উঠল। মৃন্ময়ী আসতে আসতে শিবলুও চা টা শেষ করে ফেলল। মৃন্ময়ী রেডি হয়ে আসতেই মৃন্ময়ী ওর মাকে বলে ওদের সাথে বেড়িয়ে গেল।
টং এর দোকানে এসে শিবলু বলল
-" ওদের আসতে দেরী হবে একটু। আপাতত তিনটে চা দিতে বলি কাকাকে কি বলিস?"
সিয়াম বলল
-"হুম দে। ওরা এলে আবার দিতে বলব চা। "
চা অর্ডার দিয়ে এসে শিবলু এসে ওদের সাথে বসল।
মৃন্ময়ী মাথা নিচু করে বসে আছে। সিয়াম কিছুক্ষণ মৃন্ময়ীর দিকে তাঁকিয়ে থাকল। তাদের সমস্ত বন্ধুবান্ধবগুলোর মধ্যে মৃন্ময়ী অনেক চুপচাপ। সহজে কারো সাথে কিছু শেয়ার করবে না। গুমরে গুমরে শেষ হবে তাও কিছু বলবে না। সিয়াম এসব কিছু ভেবে একটা শ্বাস ফেলে বলল
-"কি হয়েছে তোর?"
মৃন্ময়ী বলল
-"কিছুনা।"
শিবলু এবার বলে উঠল
-"কিছু না হলে এভাবে চুপ করে আছিস কেন? কিছু হয়েছে মৃয়ু?"
মৃন্ময়ী ছোট ছোট কন্ঠে বলে উঠল
-" মাঝে মাঝে মনে হয় আমি একদমই অযোগ্য সব দিক দিয়ে। আম্মু যখন বলে আমি তাদের আশা ভরসা সব শেষ করে ফেলছি। আমাকে দ্বারা কিছুই হবে না। আম্মু যখন কথাগুলো অনেক আফসোস নিয়ে বলে তখন আমার কষ্ট লাগে কি না জানিনা। এদিকে পরীক্ষা দিতে দিতে আমার পড়ালেখাও তেমন করছি না। এজন্যই আম্মু আরোও ক্ষেপেছে আমার উপর।এখন কিছুই বুঝতে পারছি না। কি করব জানি না। শুধু এটুকুই জানি আমার ভিতর টা শেষ হয়ে যায় এ সমস্ত কথাগুলো শুনলে। কেন জানি না আমার মনে হয় যত বড় হচ্ছি ততই সবকিছু আমার জন্য অনেক জটিল হয়ে যাচ্ছে। সবকিছু এত বিষাক্ত লাগে আজকাল যা আমার মানিয়ে নিতে অনেক কষ্ট হয়। কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকলে চলে যেতাম। আর ভালো লাগে না। আব্বুও হয়ত আমার উপর অনেক আপসেট। আসলেই কি আমি গুড ফর নাথিং! "_
কথাগুলো বলতে বলতে মৃন্ময়ীর চোখের কার্নিশ বেয়ে আবারও জল গড়িয়ে পড়ল।
শিবলু সিয়াম এতক্ষন ধরে সব কিছু শুনে দুজনেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সিয়াম বলল
-"এজন্যই তুই কয়দিন ধরে এমন চুপচাপ আছিস?"
মৃন্ময়ী ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আলতো করে মাথা নাড়াল। মৃন্ময়ীকে এভাবে দেখে সিয়ামের খুব খারাপ লাগল। কারণ তার বোনটা অনেক হাসিখুশি থাকে সবসময়। ওদের পুরো ফ্রেন্ড সার্কেলটাকে মৃন্ময়ী হাসিয়ে ছাড়ে। কারণ ও এমনিতে চুপচাপ থাকলেও ওদের সাথে বেশ হাসিখুশি থাকে। এদিকে শিবলুরও বেশ খারাপ লাগল। সিয়াম বলে উঠল
-"কিছু কথা বলব। মন দিয়ে শুনবি কেমন? "
মৃন্ময়ী আলতোভাবে মাথা নাড়াল। সিয়াম আস্তেধীরে বলল
-"আমরা কেউই একদম পারফেক্ট না মৃয়ু। কোনো না কোনোভাবে আমাদের সবার মধ্যেই কম বেশি কিছু কমতি আছেই বলে আমি মনে করি। কিন্তু আমাদের উচিত আমাদের মধ্যে যে ভালো গুণগুলো আছে তা নিয়েই আমাদের জীবনে এগিয়ে যাওয়া। কারণ খারাপ দিকটা নিয়েই বসে থাকলে হবে না। খারাপ বা দূর্বল দিকটাকে পিছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আর আমরা কখনোই সম্পূর্ণভাবে ভালো হতে পারব না। কথায় আছে চাঁদের গায়েও দাগ আছে। তাই তুই যেটাতে ভালো তা নিয়েই মন থেকে এগিয়ে যা। আর আমরা যেটাতে ভালো তা নিয়ে যদি চেষ্টা করি তাহলে আল্লাহ কখনোই আমাদের ফিরাবে না ইনশাআল্লাহ। আর রইল বাবা-মার শাসন এর কথা উনারা যা বলে কখনও মন থেকে বলে না। তাই কখনও উনাদের বলা কথা এতটা মনে নিবি না। এই আমাকেই দেখ আমি কানাডা চলে যাব পড়াশোনার জন্য এই কথাটা যখন আমি আমার বাবা-মাকে বলি তখন কেউই রাজি ছিল না। বকাবকিও করেছিল অনেক।কারণ আহসানুল্লাহ ভার্সিটিতে আমার ইতিমধ্যে একটা সেমিস্টার শেষ। কিন্তু যখন দেখল আমি সত্যিই সিরিয়াস আর আমি মন থেকে কানাডায় ই চলে যেতে চাই। তখন আমার বাবা আর আমাকে আটকায়নি। আমাকে সাপোর্ট করেছে। আমার পাশে আমার বাবা-মা দাঁড়িয়েছে। আএ তুই মুখ গোমড়া না করে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের মধ্যে যা প্রতিভা আছ তা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে গেলেও তোর ভালো লাগবে।যেমন তুই ভালো গান পারিস গান গাবি,ড্রয়িং করতে ভালো লাগে ড্রয়িং করবি। অনেক কিছুই করে নিজেকে ব্যস্ত রাখবি। দেখবি তোর নিজেরেও সময় টা কাটছে। তাই বলছি মন খারাপ বা চুপ করে না থেকে যেকোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবি বাবা-মার সাথে। নইলে উনারা তোর সমস্যাটা বুঝবে কি করে?"
মৃন্ময়ী চুপ করে সিয়ামের বলা কথাগুলো শুনছিল। এসময় শিবলু মৃন্ময়ীর পাশে এসে বসে বলে উঠল_
-"বাবা-মারা কখনো সন্তানদের খারাপ চায়না। একটা বয়স আসলে বাবা-মারা আমরা যখন ছোটোবেলায় যখন বাচ্চামো করতাম সেরকম করে ফেলে। কি বলতে উনারা কি বলে উনারা হয়ত বুঝতে পারেনা। পরে দিয়ে ঠিকই নিজের ভুলটা বুঝতে পারে। তাই উনাদের কথায় খারাপ কিছু না ভেবে নিজের কাজ করবি বুঝেছিস?আর কি যেনো বলছিলি কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকলে চলে যেতি বাসা ছেড়ে? বাসা ছেড়ে চলে যাওয়াটাই কোনো সমাধান নয়। বাসা ছেড়ে চলে গেলে তুই যতটা না কষ্ট পাচ্ছিস তার থেকে বেশি কষ্ট তোর বাবা-মাই পাবে দেখে নিস। আর যদি তুই উনাদের চোখের সামনেই থেকে ভালো কিছু করে দেখাতে পারিস তাহলে দেখবি উনারাও খুশি হবে আর উনাদের খুশি হতে দেখে তুইও অনেক খুশি হবি। সবকিছু অনেক জটিলভাবে না দেখে সহজভাবে দেখার চেষ্টা করবি দেখবি সমাধান খুজে পাবি। আর কোথাও চলে পেলেই হবে না। এই দুনিয়ার সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকাটা অনেক কঠিন মৃয়ু। তাই বাবা-মার ছায়ায় থেকে ভালো কিছু করে তারপর না হয় নিজ জীবনের জন্য ভালো কোনো উদ্যোগ নিলি। "
এমন সময় হুট করে সাদিয়া এসে মৃন্ময়ীর অপরপাশে এসে বসল। মৃন্ময়ীকে একপাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল
-"তুই এত কষ্টের মাঝে আছিস আমাদের জানাবি না? কেমনরে তুই?"
এদিক সিয়াম আর শিবলু সাদিয়াকে দেখে অবাক হয়ে বলে উঠল
-"তুই কোথা থেকে আসলি রে বইন?"
সাদিয়া হেসে বলে উঠল
-"শুধু আমি না আমরা সবাই এসেছি। পিছে দেখ। "
সাদিয়ার কথামতো সিয়াম আর শিবলু পিছে ফিরে দেখল শায়ওখ সাকিব অনিন্দিতা ফাহাদ সবাই ওদের দিকে দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে।
সিয়াম আর শিবলু কিছুক্ষণ ওদের দিকে তাকিয়ে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল
-"তারমানে তোরা এতক্ষণ দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছিলি? হারা*মির দল কতগুলো। "
অনিন্দিতা সিয়ামের কথায় মুখ ভেঙিয়ে বলে উঠল
-"হ্যাঁ শুনেছি তো কি হয়েছে রে ছা*গল? না শুনলে তো জানতে পারতাম না মৃয়ু এমন একটা পরিস্থিতিতে আছে। "
এবার সাদিয়া বলে উঠল
-" আমরা সবাই ভালো। শুধু আমাদের সবাইকেই চেষ্টা করতে হবে বুঝেছিস? চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই তাইনা? দিনশেষে সবাই চেষ্টাটাই দেখে। "
এবার ফাহাদ বলল
-"আর শুন কারোর চোখে আমরা ভালো হই বা খারাপ। কিন্তু প্রত্যেকটা মানুষেরই নিজেদের আলাদা একটা কল্পনার রাজ্য থাকে। আর যার যার কল্পনার জগৎ এর রাজা সে নিজেই। ছোটোবেলায় একটা গান আমরা গেতাম না "আমরা সবাই রাজা আমাদেরই রাজার রাজত্ব "৷ গানের কথাগুলো বাচ্চাসুলভ হলেও আমরা কিন্তু আসলেই আমাদের নিজেদের তৈরি কল্পনার জগৎ এর রাজা কিংবা রাণী। বলতে গেলে Somewhere somehow we the king's or queen's ( কোথাও কোনোভাবে আমরাই রাজা কিংবা রাণী)। তাই মন খারাপ হলে এসব ভেবেও তো নিজেকে বুঝ দিতে পারিস তাই নয় কি?"
এবার শায়ওখ খানিকটা হেসে বলে উঠল
-"এই যেমন আমাকেই দেখ আমাকে কালকে আমার বাবা রেগে বলেছিল বাসা থেকে বের হো বদ*মা*শ। আমি এমনিতেই কিছু কিনতে বের হয়েছিলাম। বাবা খানিকবাদে ফোন দিয়ে বলল "কিরে তুই কি সত্যিই চলে গেলে নাকি রে হাদা*রা°ম? বাসায় আয় জলদি। " বলেই হেসে উঠল।
ওর সাথে সাথে সবাই-ই হেসে ফেলল।
সাকিব বলল
-"হয়েছে এবার? এবার সব মন খারাপ শেষ করে আবার কাকাকে বলত কড়া করে চা দিতে সবাইকে।"
সিয়াম মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে চা অর্ডার দিল সবার জন্য।
বেঞ্চিতে বসে সবাই আড্ডা দিতে লাগল। এই কথায় সেই কথায় সবাই হাসাহাসি করছে। মৃন্ময়ীও হাসছে তাদের সাথে। মৃন্ময়ী বন্ধুবান্ধব সবার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল ও আসলেই অনেক ভাগ্যবতী। ওদের মত বন্ধু পেয়েছে। যারা কিনা কিছু বলার আগেই সব কিছু বুঝে ফেলে সাথে সাথে ওর পাশে দাঁড়িয়ে ওকে বুঝায়। আসলেই মন খারাপ বা চুপচাপ নিজেকে ঘরবন্দী না থেকে পড়ালেখা, কাজ সব করে যেতে হবে। বসে থেকে লাভ নেই। জীবনটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে ওর। বাবা-মার শাসনগুলো শুনে মন খারাপ করা যাবে না আর। এই ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে তারপর আবার ওদের দিকে তাকাল মৃন্ময়ী। সিয়াম চলে যাবে কানাডা আর কিছুদিন পর। তাই সবাই এখন প্রতিদিনই বের হয় সকাল সন্ধ্যায়। কারণ সিয়াম চলে গেলে ওকে আর কেউ পাবে না তেমন করে। তাই যখনই সময় পায় ওরা সবাই একসাথে ঘুরতে বের হয়। কে জানে কখন কে কোথায় থাকে তাই বর্তমান সময়টাকেই ওরা সবাই মিলে মজা,হাসি,ঠাট্টা করে কাটাচ্ছে।
আড্ডার ফাঁকে মৃন্ময়ী লক্ষ্য করল সাকিব গিটারে টুংটাং আওয়াজ করছে। তা দেখে মৃন্ময়ী বলে উঠল
-"আমরা অনেকদিন একসাথে গান গাইনা। চল না সবাই আজ একটা গান ধরি। কি বলিস? "
শায়ওখ বলল
-"কেন নয়? অবশ্যই। আসলেই অনেকদিন ধরে গান হয়না আমাদের। চল একটা গান ধরি সবাই মিলে। এই সাকিব গিটার এ আওয়াজ তোলতো। "
সাকিব মৃদু হেসে গিটারে আওয়াজ তুলল। ওমনি সবাই একসাথে সুর তুলে গেয়ে উঠল তাদের প্রিয় গান_
"পুরো পৃথিবী একদিকে আর আমি অন্যদিক
সবাই বলে করছো ভুল আর
তোরা বলিস ঠিক
তোরা ছিলি তোরা আছিস
জানি তোরাই থাকবি
বন্ধু বোঝে আমাকে
বন্ধু আছে আর কি লাগে?
সুসম্পর্ক, দুঃসম্পর্ক, আত্মীয়-অনাত্মীয়
শত্রু-মিত্র, রক্ত সম্পর্কে কেউ বা দ্বিতীয়
সৎ-অসৎ, দূরের-কাছের, বৈধ-অবৈধ
হাজারও এসব সম্পর্ক ভাঙ্গে
থাকে বন্ধুত্ব
তোরা ছিলি তোরা আছিস
জানি তোরাই থাকবি
বন্ধু বোঝে আমাকে
বন্ধু আছে আর কি লাগে?
কিছু কথা যা যায়না বলা কাউকে
কিছু কাজ যা যায়না করা সহজে
কিছু আচরণ মানে না কেউ সামনে
কিছু জায়গা যায় না যাওয়া চাইলেই
সবই হয় যদি তোরা থাকিস সেখানে
বন্ধু বোঝে আমাকে
বন্ধু আছে আর কি লাগে?
বন্ধু বোঝে আমাকে
বন্ধু আছে আর কি লাগে?"
সূর্য ডুবে যাচ্ছে। চারপাশে দুই একটা মানুষ চলাফেরা করছে। ব্যস্ততার মাঝে কেউ কেউ তাদের দিকে চঞ্চল দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। কেউ বা তাদের গান শুনছে মুগ্ধ হয়ে। হাজারও ব্যস্ততা, জটিলতা কিংবা সমস্যার মাঝেও ওদের #বন্ধুত্বগুলো থাকুক অটুট হয়ে।
যাতে মানুষগুলো পাশে না থাকলেও সবার সাথে একসাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো যেন স্মরণীয় হয়ে থাকে সবার মাঝে।
#বন্ধুত্বগুলো
#লেখনীতেঃ-মায়ামিন_মিধাত্তা
কিছু মানুষের সাথে সম্পর্কগুলো দূরের হোক কিংবা কাছের মানুষগুলোর সকল সমস্যা,সুখ,দুঃখ,কষ্ট এমনকি আনন্দের দিনগুলোতে পাশে দাঁড়িয়ে ভরসা কিংবা আশ্বাস এর হাত বাড়িয়ে দিলেই হয়ত অনেক দ্বিধা,সমস্যা কিংবা দুশ্চিন্তাগুলো নিমিষেই সহজ হয়ে যায়। এভাবেই কাছের মানুষগুলোকে দেখে রাখা কিংবা তাদের সকল সমস্যায় পাশে থেকে ভরসা দেওয়ার মাঝেই প্রকৃত সুখ বিদ্যমান।
আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন🙏।
আরো পড়ুন: