শুভ্রতা_শুভ্র (ছদ্মনাম)
___________________
_ যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আপনার বেবিটাকে আমার কাছে দিতে পারেন।
আমার সিটের পাশে বাচ্চা কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে কথাটা বলতেই সে আমার দিকে ঘুড়ে দাড়ালো।আমি আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছি লোকটির দিকে।এ কাকে দেখছি আমি? এ তো নিলয়।তিন বছর আগে আমাদের ব্রেকআপ হয়েছিলো।কারন আমার বাবা-মা আমার বিয়ে আমার কাজিন ফারহান এর সাথে ঠিক করেছিলেন। নিলয় তখনও স্টুডেন্ট ছিলো।
---কিছু মনে করব কেন? নিন।এমনিতে ওকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে আমার ও বেশ কষ্ট হচ্ছে।
নিলয়ের কথায় আমার ধ্যান ভাঙ্গে।নিলয় এর কাছ থেকে বাচ্চাটাকে কোলে নেই আমি।অনেক সুন্দর আর মিস্টি দেখতে বাচ্চাটা।দশ এগারো মাস বয়স হবে হয়তো।বাচ্চাটা ঘুমিয়ে আছে।
আচ্ছা বাচ্চাটা কি নিলয়ের?হতে পারে।নিলয়ের মতোই দেখতে।তার মানে নিলয় বিয়ে করেছে? তাহলে ওর বউ কোথায়?সাথে তো দেখছি না।
নিলয় আমাকে চিনতে পারে নি।কারন হিজাব দিয়ে আমার পুরো মুখ ঢাকা।যদি আমাকে চিনতে পারত তাহলে হয়ত ওর বাচ্চাকে আমার কোলে দিতো না। ঘুমন্ত বাচ্চটার দিকে তাকিয়ে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।
বাস থেমে গেল।আমার পাশের সিটের মহিলা বাস থেকে নেমে গেল।হঠাৎ আমি চমকে উঠলাম।কারন নিলয় আমার পাশে বসেছে।
_এবার আমার বেবিকে দিন।আপনি অনেকক্ষণ যাবৎ আমার বেবিকে কোলে নিয়ে আছেন।(নিলয়)
_কিছু মনে না করলে ও আমার কাছেই থাক?(আমি)
_আপনার কষ্ট হচ্ছে তো।(নিলয়)
_না না আমার কষ্ট হচ্ছে না।বরং ভালই লাগছে।(আমি)
_ওকে তাহলে থাক।(নিলয়)
_হুম।(আমি)
_ওকে।(নিলয়)
_আচ্ছা বেবির নাম কি?(আমি)
_নিবিড়।(নিলয়)
_খুব সুন্দর নাম।(আমি)
_ধন্যবাদ।(নিলয়)
_আচ্ছা নিবিড়ের মা কই?(আমি)
_নেই।(নিলয়)
_মানে?(আমি)
_ওর জন্মের সময়ই মারা গেছে।(নিলয়)
_ওহ সরি।তাহলে নিবিড় কার কাছে থাকে?(আমি)
_ছয় মাস বয়স পর্যন্ত আমার বোন এর কাছে ছিলো।তারপর থেকে আমার কাছেই থাকে।(নিলয়)
_ওহ।(আমি)
_হুম।(নিলয়)
_তাহলে আপনি জব করেন না?(আমি)
_করি কিন্তু এখন থেকে হয়ত আর করতে পারব না।(নিলয়)
_কেন?(আমি)
_এতদিন আমার মা ছিল আমার সাথে।তিনি নিবিড়কে সামলাতেন।কিন্তু কিছু দিন হল মা গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন।হয়ত আর আসবে না।(নিলয়)
_তাহলে কি করবেন এখন?(আমি)
_কি আর করব?জব ছেড়ে দিয়ে ছেলের দেখাশুনা করব।(নিলয়)
_এটা কোন সমাধান হলো?বেবি কেয়ার এ রাখেন।(আমি)
_গিয়েছিলাম কিন্তু তারা বলল এত ছোট বাচ্চা রাখাটা রিস্ক এতে নাকি বাচ্চার প্রবলেম হবে।(নিলয়)
_ওহ।(আমি)
_এই দেখুন, আপনার সাথে পরিচয় ই হল না।আচ্ছা আপনার নাম কি?(নিলয়)
হঠাৎ এমন প্রশ্নে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।এখন আমি কি করব? আমি কি আমার পরিচয় দিব? কিন্তু কিভাবে? ও আমাকে চিনতে পারলে কি রিয়াক্ট করবে এটা ভেবেই আমার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে।।।
_এই যে মিস কি ভাবছেন এতো??(নিলয়)
_না কিছু না।(আমি)
_আপনার নাম??(নিলয়)
_নিলয় আমি নিসা।(আমি)
কথাটা বলেই আমি মাথা নিচু করলাম। নিলয়ের দিকে তাকানোর সাহস আমার নেই।নিলয় আমাকে অনেক ভালোবাসত কিন্তু সেই আমি ই কিনা নিলয় কে ছেড়ে অন্য একজনকে বিয়ে করেছি। অবশ্য এছাড়া আর কোনো উপায়ও তো ছিল না। আমি আমার বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে।বাবা মায়ের সিদ্ধান্তের উপর কখনও কোনো কথা বলি নি। আর তখন নিলয়ও বেকার ছিল।তাই ইচ্ছে থাকলেও নিজের ভালোবাসার কথা বাবা মাকে বলতে পারি নি। কিন্তু কথায় আছে না "কাউকে কষ্ট দিয়ে কখন সুখি হওয়া যায় না" আমারও তেমনি হয়েছে। নিলয়কে আমি কখনও ভুলতে পারি নি।এখনও ভালোবাসি ওকে। আচ্ছা ও কি আমাকে এখনো ভালোবাসে?? এটা ভেবেই আমি নিলয়ের দিকে তাকালাম। নিলয় আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি ওর দিকে তাকাতেই বলল-
_নিসা তুমি? এত দিন পর? কেমন আছো নিসা?(নিলয়)
নিলয়ের কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম।আমি তো ভেবেছিলাম আমাকে চিনতে পারলে নিলয় আমার সাথে কথা তো দূর আমার পাশেও বসবে না। তাকিয়ে দেখলাম নিলয় এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
_ কি খুজছো?(আমি)
_তোমার হাজবেন্ড বাচ্চাকাচ্চা?? কাউকেই তো দেখতে পাচ্ছি না?(নিলয়)
_থাকলে তো দেখবা।(আমি)
_মানে?(নিলয়)
_কেউ নেই।(আমি)
_মানে কি? কি বলছো তুমি একটু খুলে বলো।(নিলয়)
_বিয়ের তিন মাস পর ই ফারহান আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে।(আমি)
_কিন্তু কেন?(নিলয়)
_আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি তোমার সাথে। আমাকে মাফ করে দিও নিলয়।(আমি)
_আমি তোমাকে অনেক আগেই মাফ করে দিয়েছি।আর তুমি যা করেছ তা ভুল করনি।আমি তোমার জায়গায় থাকলে আমিও হয়ত এটাই করতাম। কিন্তু ফারহান তোমাকে ডিভোর্স কেন দিয়েছে??(নিলয়)
_ নিলয় আমি কখনও মা হতে পারব না।(আমি)
_কি?(নিলয়)
_হ্যা। আর এটা শুনার পর ফারহান আমাকে ডিভোর্স দেয়।(আমি)
_আবার বিয়ে করনি?(নিলয়)
_ কে বিয়ে করবে? একে তো ডিভোর্সি তার উপর কখনও মা হতে পারব না।(আমি)
_কি বলছো এসব?(নিলয়)
_তোমার সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি আল্লাহ আমাকে দিয়েছে।(আমি)
_না এসব তোমার ভুল ধারণা। তুমি ভাবছ তুমি আমার সাথে অন্যায় করেছ তাই তোমাকে আল্লাহ শাস্তি দিয়েছেন।কিন্তু আমি কি করেছি? আমাকে কেন আল্লাহ এত বড় শাস্তি দিল?(নিলয়)
_জানি না। আমাদের সাথে কেন এমন হল?(আমি)
_আল্লাহ যা করেন ভালই করেন। সুখের পর যেমন দুখ আসে তেমনি দুখের পর কিন্তু সুখ আসে।(নিলয়)
_মানে?(আমি)
_আল্লাহ হয়ত আমাদের এই দুখের পর ই সুখ লিখে রেখেছেন।(নিলয়)
_মানে?(আমি)
_উফ এতো মানে মানে করছো কেনো? ভালোবাসো তো আমায়?(নিলয়)
_হুম।কিন্তু,,,(আমি)
_কিন্তু কি আমিও তোমাকে ভালোবাসি।(নিলয়)
_ সত্যি? এখনো ভালোবাসো?(আমি)
_হুম।(নিলয়)
_কিন্তু আমি যে মা হতে পারব না?(আমি)
_ কে বলেছে মা হতে পারবে না? নিবিড় আছে না??(নিলয়)
_হুম।(আমি)
_পারবে না নিবিড়ের আম্মু হতে?(নিলয়)
_খুব পারব।(আমি)
_তাহলে চলো।(নিলয়)
_কোথায়?(আমি)
_বাস থেমে গেছে নামো।(নিলয়)
ওহ হ্যা নামছি।(আমি)
আমরা বাস থেকে নামলাম।আমি নিবিড়কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর নিলয় আমার ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল-
_চলো।(নিলয়)
_কোথায়?(আমি)
_কাজি অফিস।(নিলয়)
_কেন?(আমি)
_তোমার এই অহেতুক প্রশ্ন করার স্বভাবটা এখনো গেলো না।(নিলয়)
_ধুর বলো না কোথায় যাচ্ছি আমরা?(আমি)
_আরে বাবা নিবিড়ের আম্মু হওয়ার জন্য আগে আমার বউ হওয়া লাগবে তো নাকি?(নিলয়)
আমি মুচকি হেসে নিলয়ের হাত ধরলাম।আর বললাম "চলো"।। সত্যিকারের ভালোবাসা কখনও হারায় না। আজ সত্যি খুব আনন্দ হচ্ছে এটা ভেবে যে আমি একজন সঠিক মানুষকে ভালোবেসেছি।। যে আমাকে সত্যি ভালোবাসে।।
___________________________
সমাপ্ত।