আজ নয় বছর পর সেই স্থানে দাড়িয়ে আছি যে স্থান থেকে তার সাথে আমার পথচলা শুরু হয়েছিল। কিন্তু আজকের আর নয় বছর আগের মধ্যে কতই না পার্থক্য। সেদিন আমার সাথে নুহান ছিল আর আজ আমি একা।
এই স্থানেই আমাদের প্রথম দেখা এখানে দাড়িয়েই নুহান প্রথম আমাকে তার ভালোবাসার কথা জানিয়ে ছিল। আমিও সেদিন তার ভালোবাসাকে গ্রহণ করেছিলাম। ভালোবাসা সুবাস আবার কখনো অভিমান মেঘ এসে জমা হতো ও দিন শেষে সেই মেঘ সরে যেত এভাবেই দুজন দীর্ঘ তিনটি বছর পাড় করে ফেলি। রাতভর তার সাথে ফোনালাপ, সময় পেলেই দুজনে প্রিয় জায়গাটিতে ঘুরতে যাওয়া, দেখা করার দিনে সে আমার জন্য একটি হলেও গোলাপ আনতে ভুলতো না। এর মাঝে নুহানের পড়ালেখা শেষ তাই সেও জবের জন্য বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করছে । বাসা থেকেও ইতিমধ্যে আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে শুরু করে। আমার লেখাপড়া যেহেতু শেষ হয়নি তাই লেখাপড়া শেষ হওয়া অজুহাতে কিছু সময় নিয়ে নিই। সবাই প্রথমে রাজি হয় না তবুও অনেক কষ্টে অবশেষে সবাইকে বুঝাতে পারি। এর মধ্যে নুহানের ও কোনো একটা চাকরির ব্যবস্থা ঠিকই হয়ে যাবে। কিছু দিনের ভিতরে নুহানের ভালো একটা চাকরি হয়ে যায়। এবং দুজনের পরিবারকে একে অপরের কথা জানাই। নুহানের পরিবার রাজি হয়ে যায় ও আমার পরিবার প্রথম একটু আপত্তি জানালেও পরে ঠিকই রাজি হয়ে যায়।
অবশেষে চারটি বছর প্রেম করার পর দুজন বিয়ে মতো পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ হই। বিয়ে পরের সময় গুলো খুব সুন্দর ভাবেই কেটে যাচ্ছিল। নুহানের পরিবারের লোকজন গুলো ছিল খুবই ভালো তারা আমাকে নিজেদের মেয়ের মতোই দেখতো। কিন্তু এত সুখ বোধ হয় আমার জন্য বেশি হয়ে গেছিল। হঠাৎ একদিন বিকেলে নুহানের ফোন থেকে এক অপরিচিত লোক ফোন দেয়। এবং জানায় ফোনের মালিকের এক্সিডেন্ট হয়েছে ও তাকে হসপিটালে নেওয়া হয়েছে। তার থেকে হসপিটালের ঠিকানা নিয়ে দ্রুত সেই হসপিটালে যাই। সেখানে গিয়ে যখন জানতে পারি আমার সে আর এই পৃথিবীতে নেই তখন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনা সেখানেই সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাই। সেন্স ফেরার পর নিজেকে কেমন যেন পাগল পাগল লাগছিল। কিছুতেই মনেকে বুঝাতে পারছিলাম না যে নুহান আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিছু দিন আগেই নুহান যখন জানতে পারে যে সে বাবা হতে চলেছে সেদিন কতই না খুশি হয়েছিল।এই তো সকালেই অফিসে যাওয়া আগে কড়া আদেশ দিয়ে গেছে যেন কোন কাজ না করি ও সময় মত যেন খাবার খেয়েনি নাহলে তার বেবি কষ্ট পাবে। সব কিছু মনে পরলেই চোখে কোণে হাজারও অশ্রুকণা এসে ভিড় করে।
কতো গুলো দিন পাড় হয়ে গেছে নুহান আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমারও ইচ্ছে করে তার কাছে চলে যেতে কিন্তু পরক্ষণেই আবার মনে পরে এখন আমি একা না আমার ভিতরে তার শেষ চিহ্নটুকু আছে। তাই সেই ইচ্ছেটাকে দূরে ঠেলে দিয়ে নতুন করে বাচার সিদ্ধান্ত নিই। কয়েক মাস পরেই আমার কোল আলো আসে আমাদের মেয়ে নূর। ওকে নিয়েই আবার জীবন যুদ্ধে নেমে পড়ি।
এর পরের দিন গুলো যে খুব সহজ ছিল তা কিন্তু নয়। নুহানের মৃত্যুর পর ভেবেছিলাম আমার শশুর শাশুড়ি হয়তো আমাকে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিবে। কিন্তু তারা তা করেনি নিজের মেয়ের মতোই তারা আমাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছে। তাই তাদের ছেড়ে যাওয়ার কথা কখনো ভাবিনি। সংসার চালানোর জন্য একটা ছোটখাটো চাকরির বন্দোবস্ত করে নেই । ভালো খারাপের ভিতর দিয়েই দিন চলতে শুরু করে। কিন্তু সব সময় আমি আমার পাশে আমার দুই বাবা ও দুই মাকে পেয়েছি। তারা পাশে না থাকলে হয়তো অনেক আগেই হাল ছেড়ে দিতাম। সত্যি বলতে তাদের মত বাবা-মা পেতে ভাগ্য লাগে।
প্রতিটা মুহূর্তে আমি নুহানকে মিস করি। রাতে তারাদের ভিড়ে তাকে খুজে বেড়াই। তাকে একটি বার দেখার জন্য রোজ স্বপ্নের দেশে পারি জমাই। কিন্তু রাত শেষে দিনের আলো ফুটলেও তার দেখা পাইনা। তার সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলো সারা জীবন আমার স্মৃতির পাতায় থাকবে। কখনো সেগুলোকে মুছে যাওয়ার সুযোগ দিব না। যখন আমার তার কথা মনে পরবে তখন নাহয় আমি তাকে স্মৃতির পাতা থেকে খুজে নিবো।
_সমাপ্ত_
স্মৃতির_পাতা
#Tasfia_Tiasha
আরো পড়ুন