লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা 🌼
অনুগল্প
রাত প্রায় দুইটা বেজে ৩০ মিনিট লাল টুকটুকে বউ এর সাজে গুটি শুটি হয়ে বসে আছি শত ফুলে সজ্জিত একটি ঘরে। মনে অসম্ভব ভয় করছে না জানি কেমন হবে তিনি যার হাত ধরে এসেছি এ বাড়িতে ।সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়েছে আমার তাই আমার স্বামী কেমন তার স্বভাব সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণাও আমার নেই। আমি নিশি বয়স ১৯ এবার সবেমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলাম আর যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে তার নাম নিহান আহমেদ ,খুব বড় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ।বিয়ের আগে শুধু একবার দেখেছিলাম ওনাকে, যেদিন উনি আমাকে দেখতে আমাদের বাড়ি গিয়েছিলেন তারপর আর দেখা হয়নি। অবাক হই এই যুগের ছেলে হয়েও উনি আমার সাথে বিয়ের আগে কখনো কোন রকম যোগাযোগ করেননি এই ভেবে। অথচ এখানকার দিনের ছেলে মেয়েরা বিয়ের আগেই কতবার দেখা করে। আর উনি আমাকে দেখে আসার পর আমার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য প্রায় আড়াই মাস পর আজ আমাদের বিয়ে হয়েছে তার ওপর বিয়ের পর যখন আমরা এক গাড়ি করে এই বাড়ি পর্যন্ত এলাম তখনও আমাকে একটা কথা পর্যন্ত বলল না ।তবে কি উনি ও আমার মত পরিবারের চাপে পড়ে বিয়েটা করলেন নাকি উনি অন্য কাউকে পছন্দ করেন কিচ্ছু বুঝছিনা তার ওপর আরও অসহ্য লাগছে বিয়ের ভারী সাজে ,কখন যে আসবে কে জানে আমার তো খুব ঘুম পাচ্ছে !
_______
__নিশি, এই নিশি!
হঠাৎ করে কারো আদুরে গলায় নিজের নাম শুনে ধীরে ধীরে চোখ খুলে আবছা চোখে কোন ছেলেকে নিজের দিকে ঝুকে আছে দেখে ভয়ে যেই চিৎকার দিতে যাবো তখনই সামনে থাকা ছেলেটা মুখ চেপে ধরে বলল,,
'এই কি হয়েছে!এমন করছো কেন ?এই ভালো করে দেখো আমি ,আমি নিহান তোমার হাজব্যান্ড'
' আমি তোমার হাজবেন্ড 'কথাটা কর্ণকুহর হতেই যেন আমার সারা শরীরে এক শিহরণ হয়ে গেল। আমি শান্ত হয়ে উঠে বসতেই উনি আমার সামনে বসে বললেন,,
' এত ঘুম পাগলি তুমি! আমি আসা পর্যন্ত আমার জন্য একটু অপেক্ষাও করতে পারলে না ?আমাকে নিয়ে ঘুমাতে !'
ইসস এটা কি করলাম ঘুমিয়ে গেলাম একটু অপেক্ষা করতে পারলাম না ।আর ঘুমিয়েছি বলে এভাবে বলবে ওনার কথা শুনে যেন হাজারো লজ্জা এসে আমাকে ঘিরে ধরল । আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে উনি বললেন,,,
' আরে লজ্জা পেতে হবে না আমি এমনি বলেছি, আচ্ছা চলো বারান্দায় যাই ।'
ওনার কথা শুনে আমি বলে উঠলাম
' এত রাতে বারান্দায় যাব কেন ?'
আমার কথা শুনে উনি বললেন ,,,
'আজকে আমি দুই চাঁদ একসাথে দেখব তাই চলো তো'
বলেই আমার হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে গেলেন। বারান্দায় গিয়ে আমি পুরো অবাক কি সুন্দর করে বিভিন্ন আর্টিফিশিয়াল ফুল আর ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো পুরো বারান্দাটা সাথে বারান্দায় থাকা দোলনা টাও। এত সুন্দর করে সাজানো সব কিছু দেখেই আমি মুগ্ধ, খোলা দক্ষিণা বারান্দা হাওয়াও বইছে বেশ সব মিলেয়ে বারান্দার এই পরিবেশ খুব মনে দরেছে আমার। আমি যখন বারান্দার এই সৌন্দর্য উপভগ করতে ব্যস্ত তখন উনি আমার হাত ধরে নিয়ে দোলনায় বসিয়ে আমার পাশে বসে আমার কাঁধে মাথা রেখে বসে পড়লেন। সবকিছু এত দ্রুত হল যে আমি সবটা বুঝে কিছু বলার আগেই উনি আমাকে বললেন ,,,
'একদম চুপচাপ বসে থাকবে কোন কথা বলবে না, আমাকে কিছুক্ষণ এই শান্তিটা উপভোগ করতে দাও।'
ওনার কথা শুনে আমি পুরো থ আর কথা বললাম না চুপ করেই বসে রইলাম আর উনি আমার কাছে মাথা দিয়েই বসে রইলেন। কেমন একটা ফিলিংস হচ্ছে বুকের ভেতর হার্টবিট এত বেড়ে গেছে যে মনে হচ্ছে হার্ডটা এখনই বেরিয়ে আসবে! তাও হাত মুঠো করে চুপ করে বসে আছি ।
বেশ খানিকক্ষণ পর উনি আমার কাদ থেকে মাথা তুলে আমাকে উনার দিকে ঘুরিয়ে বললেন ,,
'জানো নিশি যেদিন তোমাকে প্রথম ছবিতে দেখেছিলাম সেই দিনই খুব ভালো লেগেছিল তোমাকে, তারপর যখন তোমাকে তোমাদের বাড়িতে সামনাসামনি দেখলাম তখন থেকেই তোমাকে ভালবাসতে শুরু করছি।'
উনার কথা শুনে আমি বললাম ,,,
'এতই যখন ভালোবাসেন তাহলে বিয়ের আগে কেন কোন কথা বলেননি ?'
আমার কথা শুনে উনি মুচকি হেসে বলেন,,
' কেন তোমার বুঝি খুব ইচ্ছে ছিল বিয়ের আগে আমার সাথে প্রেম করার ?'
উনার কথা শুনে লজ্জায় জেন মরি-মরি অবস্থা ধুর কি বলে ফেললাম মুখ ফসকে !আমাকে এমন কাচুমাচু করতে দেখে উনি হেসে বললেন ,,,
'আচ্ছা থাক আর লজ্জা পেতে হবে না, বিয়ের আগে কথা বলিনি কারন আমি চাইনি পরীক্ষার আগে তোমার মাথায় কোন প্রেমের ভূত চাপুক আমি চেয়েছি আমার বউটা যেন খুব ভালো পরীক্ষা দেয় আর ভালো একটা রেজাল্ট করে ।নিহান আহমেদের বউ বলে কথা পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট না করলে কি চলে?'
উনার কথা শুনে আমি আবারো বললাম ,,,
'তাহলে গাড়িতে যখন আমি কান্না করছিলাম তখন কেন কিছু বলেননি?'
আমার কথা শুনে উনি আবারো হেসে বললেন,,
' কারণ গাড়িতে সামনের সিটে ভাইয়া ছিল তাই ,আমার তো তোমাকে আগলে তো মন চাচ্ছিল তাই কিছু বলিনি ।'
ওনার কথা শুনে নিজেই নিজেকে বকতে ইচ্ছে করছে কি দরকার ছিল বোকার মত এসব জিজ্ঞেস করার। আর বারবার এমন লজ্জায় পড়ার । আমাকে এমন বারবার লজ্জায় পড়তে দেখে উনি বললেন,,,
' হ্যাঁ হয়েছে এত লজ্জা পেতে হবে না, এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আমাকে একটু জিজ্ঞেসই তো করেছ তাই না? আচ্ছা শোনো তোমাকে কিছু বলার আছে ,'
তারপর উনি আমার হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললেন,,,
' সব সময় তোমাকে খুশি রাখবো কোন দুঃখের আঁচ পেতে দেবো না। ছায়া হয়ে রইবো তোমার পাশে কোন দুঃখকে তোমার দুয়ার মুখ হতে দেবো না তুমি শুধু আমার আর আমার পরিবারের প্রত্যেক কে আপন করে আগলে রাখবে । ব্যাস এতোটুকুই চাই তোমার কাছে আর কিছু না ,'
মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম ওনার কথাগুলো প্রথম দিনেই কেউ কাউকে এতটা আগলে নিতে পারে ভাবতেও পারিনি । আমার ভাবনার মাঝে উনি আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললেন,,,
'কি হলো কোথায় হারিয়ে গেলে রাখবে তো আমাদের আগলে ?'
বিনিময়ে আমি মাথা নেড়ে বললাম,,,
' কথা দিলাম সবাইকে আগলে রাখবো সবাইকে সবসময় নিজের পরিবারের লোক মনে করে দেখভাল করব , কখনো এই পরিবারের কাও কে অমর্যাদা করবো না ।'
আমার কথা শুনে উনি আমাকে কাছে টেনে নিয়ে নিলেন আমিও চুপটি করে উনার বুকে মাথা রাখলাম।
দোলনায় বসে দুলছি আমরা মনে হচ্ছে না উনার সাথে আজই আমার প্রথম দেখা মনে হচ্ছে কত শত বছরের চেনা । নিজেকে এখন বকতে ইচ্ছে করছে কি ভেবেছিলাম আমি ওনার সম্বন্ধে আমার সাথে কথা বলছে না মনে হয় বিয়েটা মন থেকে করেনি ,বা কেউ আছে মনে হয় অথচ উনি আমাকে কত ভালবাসেন যা ওনার কথাতেই আমি বুঝতে পারি। কত ভেবেছিলাম কেমন জানি হবে উনি কিন্তু সেই ওনার বুকেই মাথা রেখে যেন কত শান্তি পাচ্ছি মনে হচ্ছে না উনি আমার সবে মাত্র চেনা এক পুরুষ মনে হচ্ছে কত চেনা আপনজন। হয়তো একেই বললে হালাল বন্ধনের টান যে বন্ধন আল্লাহ ঠিক করে রেখেছেন সকলের জন্য। শুনেছি স্বামী স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক হয় আজ সত্যই মনে হচ্ছে আজ ওনাতেই যেন পূর্ণ হলাম আমি। এসব ভেবেই মুচকি হাসলাম , সাথে নিজেকে ওয়াদা দিলাম যে কখনো ওনাকে ছাড়বো না , সকল সুখে-দুখে একে অপরের সাথী হয়ে রবো ।
সমাপ্ত...
(আসসালামুয়ালাইকুম,, কেমন আছেন সবাই? অনেক দিন পর আবারো লিখতে বসেছি জানি না কেমন হয়েছে,, তাই ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দষ্টিতে দেখবেন,,,)